কানাইঘাট লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের কুওরঘড়ি গ্রামে একটি নিরীহ পরিবারের যাতায়াতের রাস্তা, বাঁশের গড়, কাঁটা ফেলে যাতায়াত বন্ধ করে দেয়ার ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সহ তার পিতা গুরুতর আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় কানাইঘাট থানায় হামলাকারী ৫ জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করার পর আসামীরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই আব্দুল জলিল আসামীদের গ্রেফতার করছেন না বলে মামলার বাদী নিরীহ শাহাব উদ্দিন জানিয়েছেন। আসামী ও তাদের পরিবারের লোকজন প্রকাশ্যে বাদী ও সাক্ষীদেরও হুমকি দিচ্ছে বলে তিনি জানান। স্থানীয় লোকজন আসামীদের গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, কুওরঘড়ি গ্রামের মৃত শফিকুল হকের পুত্র নাজিম উদ্দিনের মালিকানাধীন বাড়ির যাতায়াতের রাস্তা বেদখল করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে একই বাড়ির মৃত তজম্মুল আলীর পুত্র বশির আহমদ ও ফয়েজ আহমদ গংরা চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। পূর্বে ২ বার নাজিম উদ্দিনের রাস্তা বাঁশের গড় দিয়ে বশির আহমদ গংরা বন্ধ করে দিলে থানা পুলিশ অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাস্তা থেকে বাঁশের গড় অপসারণ করে এবং ভবিষ্যতে বশির আহমদ কখনও নাজিম উদ্দিনের পরিবারের যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করবে না বলে সালিশ বিচারে আপোষনামায় স্বাক্ষর দেয়। কিন্তু নাজিম উদ্দিনের ভাই মামলার বাদী শাহাব উদ্দিন জানান, গত ২২শে জুন দুপুর ১২টার দিকে বশির আহমদ তার পরিবারের লোকজনকে নিয়ে পুণরায় তার ভাই নাজিম উদ্দিনের বসত বাড়ির যাতায়াতের রাস্তা বাঁশের গড় ও কাঁটা ফেলে বন্ধ করে দেয়। ঐদিন বিকেল ২টার দিকে নাজিম উদ্দিন বিষয়টি গ্রামবাসীকে জানিয়ে তার রাস্তায় কেনো বাঁশের গড় দেয়া হলো বশির আহমদ গংদের কাছে জানতে চান। এতে বশির আহমদ ও তার ভাই ফয়েজ আহমদ, বশির আহমদের ছেলে আয়াজ উদ্দিন, মেয়ে রাহিমা বেগম, স্ত্রী সায়বান বেগম দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নাজিম উদ্দিনের হামলা চালায়। হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র নাজিম উদ্দিনের মাথায় গুরুতর জখম সহ এলোপাতাড়ি ভাবে পিঠিয়ে প্রাণে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় নাজিম উদ্দিনের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া বেগম (১৬) হামলাকারীদের কবল থেকে পিতাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসলে হামলাকারী আয়াজ উদ্দিন ও সায়বান বেগম দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে সুমাইয়া বেগমের মাথায় স্বজোরে আঘাত করে রক্তাক্ত গুরতর জখম এবং লাঠি-সোটা দিয়ে পিঠিয়ে বাম হাত ভেঙ্গে ফেলে। হামলাকারীদের হাতে এ সময় নাজিম উদ্দিনের ভাগ্নি সাহিনা বেগমও আহত হন।
একপর্যায়ে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন নাজিম উদ্দিন ও তার মেয়ে সুমাইয়া বেগমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ সুমাইয়া বেগমকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে সেখানে ৪দিন চিকিৎসাধীন সুমাইয়া। বর্তমানে নিজ বাড়িতে মাথায় ও হাতে গুরুতর জখমের ব্যান্ডেজ নিয়ে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে সুমাইয়া সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে কাতরাচ্ছে। স্থানীয় গ্রামবাসী এমন ন্যাক্কার জনক হামলার ঘটনার পর নাজিম উদ্দিনের রাস্তা থেকে বাঁশের গড় তুলে ফেলেন এবং হামলাকারীদের শাস্তির দাবীতে সোচ্চার হন।
এ ঘটনায় আহত নাজিম উদ্দিনের বড় শাহাব উদ্দিন বাদী হয়ে ২৩ জুন থানায় হামলাকারী ৫ জনকে আসামী করে অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ ঘটনার সত্যতা পেয়ে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাটি রেকর্ড করে, থানার মামলা নং- ১৭।
মামলাটি রেকর্ড হওয়ার পর এসআই আব্দুল জলিলকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হলে একদিন বাদীর বাড়িতে গিয়ে ঘটনার তদন্ত করেন।
মামলার বাদী শাহাব উদ্দিন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, তার ভাই নাজিম উদ্দিন ও ভাতিজি এসএসসি পরীক্ষার্থী সুমাইয়া বেগমকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। থানায় মামলা দায়ের করা হলেও আসামীরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে এবং আমাদেরকে মামলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য আসামী আয়াজ উদ্দিন প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। বার বার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই আব্দুল জলিলকে আসামীদের গ্রেফতারের জন্য বললেও তিনি কোন আসামীদের গ্রেফতার করছেন না। আমাদেরকে বলেছেন আসামীদের সন্ধান পেলে উনাকে বলার জন্য, কিন্তু আসামীরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করার বিষয়টি বলার পর তিনি বলেন ঈদের ছুটিতে তার বাড়িতে গেছেন। শনিবার থানায় চলে আসার পর আসামীদের সাথে সাথে গ্রেফতার করবেন। শনিবার তিনি থানায় আসার পর মামলার আসামী আয়াজ উদ্দিন তার বাড়িতে অবস্থান ও রাত্রি যাপন করলে বিষয়টি রাত ১১টার দিকে তাৎক্ষণিক আমরা এস.আই আব্দুল জলিলকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানাই। তখন তিনি আমাকে বলেন, রাতে নাইট ডিউটি আছে, তখন তিনি আসামীকে গ্রেফতার করবেন। এভাবে রাত প্রায় ২টা পর্যন্ত আসামী আয়াজ উদ্দিনকে নজরে রাখার পরও তিনি আসামী ধরতে যাননি। একপর্যায়ে আমি আবারো উনাকে ফোন দিলে তিনি আমাকে বলেন আসামীকে শান্তিতে ঘুমাতে দাও, আমার সোর্স আছে, তোমরা বাড়িতে গিয়ে ঘুমাও। আবারো ফোন দিলে এস.আই আব্দুল জলিল আমাকে বলেন, রবিবারের মধ্যে আসামীরা কোর্ট থেকে জামিনে এসে আমাকে রিকল না দিলে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে।
এ ব্যাপারে থানার এসআই আব্দুল জলিলের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, মামলার আসামীদের গ্রেফতার করতে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাদী সঠিক কথা বলছেন না। গত শনিবার ঈদের ছুটির জন্য থানায় জনবল কম থাকার কারনে আসামী গ্রেফতারের অভিযান চালাতে পারিনি। তবে আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলে তিনি জানান।