নেত্রকোণা প্রতিনিধিঃ
নেত্রকোণায় প্রতিটি বাজারে জিনিসপত্রের দাম প্রায় প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে । এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির কারনে নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের জীবন-যাত্রায় পড়েছে বিরূপ প্রভাব।
বিগত কয়েকদিন নেত্রকোনা শহরের মেঁছুয়া বাজার তেরী বাজার, জয়ের বাজার সহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) খুচরা বাজারদরের তালিকা পর্যালোচনা করে দাম বাড়ার এই চিত্র দেখা গেছে।
সামনে নেই কোনো উপলক্ষ বা বিশেষ দিন তার পরেও দফায় দফায় বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম যেন আগুন লেগেছে বাজারে। বেড়েছে সবজি মাছ মাংস মসলার দাম। করলা, লাউ, ধুন্দুল, বরবটিসহ আরও অনেক সবজি কেনা এখন সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য।
এদিকে বেড়েছে চিনি ও পেঁয়াজের দামও। কয়েকদিন আগে ১২০ টাকায় বিক্রি হওয়া খোলা চিনি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। আর হঠাৎ করেই পেঁয়াজ কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়।
এ সপ্তাহে সবজির বাজারে মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় আছে পেঁপে, লাউ, করলা, উস্তা, কচুর লতি, বরবটি, ধুন্দুল, সজনে ডাঁটা এবং কাঁকরোল। আর অন্যান্য সব সবজির দাম কিছুটা আগের মতোই আছে।
প্রতিকেজি সজনে বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকায়। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। ১ কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা, যা দুই সপ্তাহ আগেও ছিল ৩৫-৪০ টাকা। প্রতিকেজি লতি, করলা, উস্তা, চিচিঙ্গা, বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ১০০-১২০ টাকা।
কম দামি সবজির মধ্যে প্রতিকেজি পাকা টমেটো ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। মিষ্টিকুমড়া প্রতি পিস কাঁচা ৪০ এবং পাকাটা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় আলু প্রতিকেজি ৩৫-৪০ টাকায়। লেবু হালি ৩৫-৪০ টাকা। আর সব ধরনের শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়।
ঈদুল আজহা আসতে এখনও অনেক দেরি। কিন্তু তার আগে মসলার দাম বেড়ে গেছে দিগুন। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ৪৫-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো। আমদানি করা পেঁয়াজ ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা।
বর্তমানে দেশি নতুন রসুনের দাম কেজিপ্রতি ১৭০-১৯০ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল মাত্র ৮০ থেকে ১২০ টাকা। সে হিসেবে রসুন কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আদার দাম। বর্তমানে প্রতিকেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২২০ টাকায় এবং চায়না বা আমদানিকরা আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়।
প্রতিকেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৯০০-১০০০ টাকায়। শুকনা মরিচ ইন্ডিয়ান প্রতিকেজি ৪২০ টাকা এবং দেশি শুকনা মরিচ প্রতিকেজি ৩৭০ টাকা। হলুদ গুঁড়া কেজি ৩৫০ টাকা, গুঁড়া মরিচ কেজি ৫৫০ টাকা, ধনিয়া প্রতিকেজি ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে চাল ও ডালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আটাশ চাল ৫৫ টাকা, মিনিকেট চাল ৭২, গুটি স্বর্ণা চাল ৫০, নাজির শাইল ৮০ টাকা, পাইজাম চাল ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মসুর ডাল দেশি প্রতিকেজি ১৪০-১৫৫ টাকা এবং আমদানি মসুর ডাল ১০০-১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অ্যাঙ্কর ডাল প্রতিকেজি ৮০ টাকা। মুগ ডাল প্রতিকেজি ১৪০ টাকায়।
সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দামে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। প্রতিকেজি ব্রয়লার ২৪০ টাকা, লাল মুরগি প্রতিকেজি ৩৫০ টাকা, বড় সাইজের সোনালি এবং কক প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকায়। দেশি পাতি হাঁস প্রতিটি ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতিকেজি হাড়সহ ৭৩০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি খাসির মাংসের দাম এখন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত। ছাগলের মাংস ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আধাকেজি ওজনের বেশি ইলিশের দাম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। এক কেজি বা তার ওপর ওজনের ইলিশের দর ১৬০০ টাকা। এক কেজি ওজনের রুই মাছের দাম ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। কাতল মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। কাচকি মাছ ৪৫০-৫০০ টাকায়, ট্যাংরা ৬০০-৭০০ টাকা, আইড় মাছ ৭০০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাশ মাছ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। সিলভার কাপ ২০০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে বাজার ভেদে ৪৫০ টাকা। কার্প মাছের কেজি ২৫০ থেকে বাজারভেদে ৩০০ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরা ব্যবসায়ী জানান তারা আড়ৎ থেকে আমরা মাল কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করি।এখন মহাজনদের কাছথেকে বেশি দামে আনতে হয় তাই বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া তো আমাদের আর কোন উপায় নাই।
বাজারে একাধিক ক্রেতার সাথে কথাবলে জানা গেছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে তারা অনেকটাই বেকায়দায় পড়েছে।
বাজারের পণ্যের দাম বাড়লেও আয় তেমন বাড়েনি যার ফলে পরিবার-পরিজন কে নিয়ে সংসার চালানো এখন কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে সরকারের বাজার মনিটরিং এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানান সাধারণ ক্রেতা ও ভোক্তাগন।